ক্লোনিং কি?
ক্লোনিং কাকে বলে? ক্লোন মানে কি? ক্লোনিং কিভাবে করা হয়?
ক্লোনিং মানে হচ্ছে কোন জীবের বা জীবের ডিএনএ কিংবা ডিএনএ তে থাকা কোন জিন এর হুবুহু কপি তৈরি করা। জিন, কোষ, টিস্যু কিংবা আস্তো একটা প্রানিরই ক্লোন তৈরি করা যেতে পারে। ক্লোনিং প্রাকৃতিক ভাবে হতে পারে। যেমন এককোষী ব্যাকটেরিয়া অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে হুবুহু একই ধরণের অনেকগুলো এককোষী ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করে। আবার মানুষের আইডেন্টিক্যাল টুইন বেবি জন্ম হওয়াও এক ধরণের প্রাকৃতিক ক্লোনিং। এক্ষেত্রে সাধারণত নিষিক্ত ডিম্বাণুটি দৈব ভাবে দুইটা ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আবার কৃত্রিম ভাবেও ল্যাবরেটরিতে ক্লোনিং করা হয়। বিজ্ঞানীরা কোন জিন এর গঠন এবং কার্যকলাপ বোঝার জন্যে কিংবা রিকম্বিনেন্ট জীব তৈরি করার জন্যে জিন ক্লোনিং করে থাকেন। এইক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা তাদের নির্বাচিত জীব হতে টার্গেট জিনটি সংগ্রহ করেন এবং সেটাকে কোন জিন বাহক ( যেমন ই.কোলি ব্যাকটেরিয়া ) এর ডিএনএ এর সাথে সংযুক্ত করে বাহকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। বাহক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তার ভেতরে টার্গেট জিন এর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আস্তো একটা প্রানির ক্লোনিং কে বলে অ্যানিমেল ক্লোনিং। এইটা দুইটা উপায়ে হতে পারে। প্রথম উপায়টা হল ভ্রুন টুইনিং। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা একটা প্রানির ভ্রুনকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেন এবং তারপরে সেগুলোকে স্ত্রী প্রানির জরায়ুতে স্থানান্তর করেন। এভাবে ধীরে ধীরে মায়ের জরায়ুতে ভ্রূণটির দুইটা ভাগ থেকে হুবুহু একই জিনোম বিশিষ্ট দুইটা প্রাণী সৃষ্টি হতে থাকে। দ্বিতীয় উপায়টা হচ্ছে সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফার। সোমাটিক সেল বা দেহকোষ হল ডিপ্লয়েড কোষ। অর্থাৎ এদের দুই সেট ক্রোমোজোম থাকে। এরা জনন কোষ না। বিজ্ঞানীরা প্রথমে স্ত্রীজননাঙ্গ এর ডিম্বাশয় থেকে একটা ডিম্বাণু কোষ সংগ্রহ করে সেটার ভেতর থেকে নিউক্লিয়াসটাকে সরিয়ে ফেলেন। তারপরে যার ক্লোন করা হবে তার শরীরের দেহকোষ থেকে নিউক্লিয়াসটা সংগ্রহ করে ডিম্বাণু কোষটির ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। এভাবে আস্তে আস্তে ডিম্বাণুটি একটা ভ্রূণে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ভ্রূণটাকে মায়ের জরায়ুতে স্থানান্তরিত করে দেয়া হয়। ধীরে ধীরে ভ্রুনটা মায়ের জরায়ুতে বড় হতে থাকে এবং সৃষ্ট নবজাতকের জিনোম যার দেহকোষ থেকে নিউক্লিয়াস নেয়া হয়েছিল হুবুহু তার মতন হয়। ১৯৬৬ সালে স্কটিশ বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম ডলি নামক একটা ভেরার ক্লোনিং করেন।
ক্লোনিং আরও দুইটা প্রসেস হলোঃ
রস্লিন পদ্ধতিঃ এটাও সোমাটিক সেল নিউক্লিয়ার ট্রান্সফারের মত তবে সামান্য একটু আলাদা। রস্লিন ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা ডলিকে সৃষ্টি করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতির সবকিছুই আগের পদ্ধতির মত, তবে এক্ষেত্রে সংগ্রহকৃত দেহকোষটিকে প্রথমে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজন হতে দেওয়া হয়, এবং এক পর্যায়ে খুব কম পরিমাণ নিউট্রিয়েন্ট (পুষ্টি পদার্থ) সরবরাহ করা হয় যাতে সেলটি নিষ্ক্রিয় ধাপে (G0 Stage) চলে যায়। অতঃপর ডিম্বক কোষটি খুব কাছাকাছি রেখে বৈদ্যুতিক শক্ প্রদান করে কোষ দুটিকে একীভূত (Fusion) করা হয়। এরপরের ধাপগুলো মুল পদ্ধতির মতোই।
হনলুলু পদ্ধতিঃ এটা ক্লোনিং এর নতুন পদ্ধতি যদিও এটা সেই মুল প্রক্রিয়ার মতোই। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. তেরুহিকো ওয়াকায়ামা এই পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন। এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস বিহীন ডিম্বাণুতে দেহকোষের নিউক্লিয়াসটি মাইক্রোইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হয়। অতঃপর রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে নিষেক ও কোষ বিভাজন শুরু করানো হয়। তারপর যথারীতি একই পদ্ধতিতে ভ্রূণটি একটি পূর্ণ প্রাণীতে পরিণত হয় এবং ভূমিষ্ঠ হয়।
আরও পড়ুনঃ ১। ক্লোন এবং ক্লোনিং কি?