এনজাইম কী?
আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়ায় এনজাইম আমাদের সাহায্য করে। এই এনজাইম আসলে কী?
এনজাইম কি
এক কথায় বলা যায় এনজাইম হল জৈব প্রভাবক বা উৎসেচক। এনজাইমকে জৈব প্রভাবক বলার কারণ হচ্ছে এরা আমাদের দেহের জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়া গুলোকে প্রভাবিত করে। শুধুমাত্র রাইবোজাইম ছাড়া অধিকাংশ এনজাইমই উচ্চ আনবিক ভর বিশিষ্ট প্রোটিন। প্রভাবক বলতে সেসব রাসায়নিক যৌগ কে বোঝাচ্ছি যারা কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়াতে কিংবা কমাতে পারে। আমাদের জানা দরকার যে জীবনের দুটি মৌলিক শর্ত হল:
- প্রত্যেক জীবের অবশ্যই তার অনুরূপ বংশধর তৈরির ক্ষমতা থাকতে হবে
- জীবদের অবশ্যই তাদের দেহে ঘটা প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়া সমূহ কে নিয়ন্ত্রণ তথা প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
এই শর্ত গুলো বলবার কারণ হচ্ছে জীবনের এই মৌলিক বিষয় বস্তুর উভয় ক্ষেত্রেই এনজাইমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেই জন্যে এনজাইমোলজি কে জীবনের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় বস্তু বলা চলে। প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকা থেকে শুরু করে বংশধর তৈরি এবং মারা যাবার পরে তার মৃত দেহটি প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া পর্যন্ত সব জায়গায় এনজাইমের ভূমিকা রয়েছে।
খাবার খাওয়া এবং হজম এর কথাই ভাবুন। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আমরা যেসব খাবার খাই তার বেশির ভাগই অনেক জটিল, শক্ত ধরনের। আমাদের দাঁত আছে বলে আমরা অনায়েসেই এসব শক্ত শক্ত খাবার গুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারি। তারপর জিহ্বা দিয়ে তালুর উপর চাপ দিয়ে পাকস্থলীতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর? তারপর কি হয় এসব জটিল জটিল খাদ্য বস্তুর? আমরা তো খাবার খাই আমাদের দেহের কোষ গুলোকে পুষ্টি দেবার জন্যে। কিন্তু আমরা তো সরাসরি পুষ্টি গ্রহণ করছি না। আমরা কতগুলো শক্ত শক্ত খাবারের টুকরো দিচ্ছি। কোষের তো আর আমাদের মতো ধারালো দাঁত নেই যে তারা সেগুলোকে ভেঙ্গে পুষ্টি গুলো আলাদা করবে। আসলে আমাদের পাঠানো শক্ত জটিল খাবার গুলো পরিপাক নামক একটি শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কতগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সরল পুষ্টি উপাদানে পরিণত হয়। তারপর কোষ সেগুলোকে শোষণ করতে পারে।
এনজাইমের কারণে এসব প্রাণরাসায়নিক বিক্রিয়া গুলো খুব দ্রুত গতিতে ঘটে। এনজাইম ছাড়া এসব বিক্রিয়া গুলো খুব ধীর গতিতে ঘটত। এতে আমাদের মৃত্যু অবশম্ভাবী হতে পারে। এনজাইম একটি বিক্রিয়ার গতি কয়েকশ থেকে কয়েক লক্ষ-গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরুপ ওরোটিডাইন ৫-ফসফেট ডিকার্বোক্সিলেজ এনজাইম এটির সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়া কয়েক মিলি সেকেন্ডে ঘটাতে পারে। কিন্তু এনজাইমটি ছাড়া বিক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মিলিয়ান বছর লেগে যাবে। এনজাইমের এই ধর্ম কে বলা হয় তার প্রভাবন ধর্ম। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট এনজাইম নির্দিষ্ট রাসায়নিক যৌগের উপর কাজ করে। এই ধর্মকে বলা হয় সাবস্ট্রেট স্পেসিফিসিটি (substrate specificity)। এনজাইম যে যৌগের উপর কাজ করে তাকে বলা হয় সাবস্ট্রেট (substrate)। কিছু কিছু রাসায়নিক যৌগ এনজাইমের কার্যক্রম কে বাধা দেয় এদের কে বলা হয় ইনিহিবিটর। উদাহরণস্বরূপ: বিভিন্ন ড্রাগ, বিষ। আবার কিছু কিছু রাসায়নিক যৌগ এনজাইমের কার্যক্রম এর গতি কে বাড়িয়ে দেয় এদেরকে বলা হয় অ্যাকটিভেটর। যেমন হেক্সোকাইনেজ-১।