জিন থেরাপি কাকে বলে?
জিন থেরাপি কি?
জিন থেরাপির মাধ্যমে কোন রোগ নিরাময় করা হয়?
জিন থেরাপির উদাহরণ?
জিন থেরাপি কি?
জিন থেরাপি বলতে মোটা দাগে বোঝায় যে কোন ধরনের জিনগত রোগের চিকিৎসা করা। এ ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ন জিন গুলোকে একদম ডিএনএ পর্যায়ে গিয়ে শোধরানো হয়। অন্যভাবে বললে জিন প্রকৌশলের (Genetic Engineering) মাধ্যমে মানুষের ত্রুটিপূর্ণ কোন জিনকে স্বাভাবিক জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করাকে জিন থেরাপি (Gene Therapy) বলে। এ প্রক্রিয়ায় রোগের জন্য দায়ী জিনটা বাদ দেয়া হয় অথবা সেটাকে একটা ভাল জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। আর ঠিক এ কারণেই জিন থেরাপি খুবই নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা। জিন থেরাপি সাধারণ রোগ নিরাময় পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কারণ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ প্রয়োগে শুধু রোগের লক্ষণ ও বাহ্যিক সমস্যা গুলো কমে যায় কিন্তু অসুখটি পুরাপুরি নিরাময় হয়না, যে কারণে পরে আবার রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু জিন থেরাপির মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ জিন গুলিকে ভালো জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। যাতে করে ক্ষতিকর প্রোটিনের স্থলে শরীর সঠিক এনজাইম (Enzyme) বা প্রোটিন (Protein) উৎপাদনে সক্ষম হয়। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে এই চিকিৎসা পদ্ধতির পার্থক্য হলও জিন থেরাপির মাধ্যমে শুধু রোগের উপশমই করা হয় না জিনের বৈশিষ্ট্য-গত ত্রুটি দূর করে একে সমূলে নিবারণ করা হয়।
জিন থেরাপির মাধ্যমে কোন রোগ নিরাময় করা হয়?
জিন থেরাপি দিয়ে থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, দৃষ্টিহীনতা, ক্যান্সার ও পারকিন্সন্স ডিজিজ নিরাময় করা সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতিক একটা গবেষণা বলছে প্রোজেরিয়া রোগের সমাধানও সম্ভব জিন থেরাপি দিয়ে।
জিন থেরাপির উদাহরণ
অতি সম্প্রতি ২০১০ সালের শেষের দিকে, ফ্রান্সের ১৮ বছর বয়স্ক এক রোগীকে জিন থেরাপি দিয়ে বেটা-থ্যালাসেমিয়া রোগ থেকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এই রোগীর ক্রোমোজোমে বেটা-হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য দায়ী জিনটি ত্রুটিপূর্ণ বা অনুপস্থিত ছিল। বেটা-হিমোগ্লোবিনের অনুপস্থিতির কারণে রক্ত পুরোপুরি কার্যক্ষম ছিলনা ফলে কিছু দিন পরপর তার দেহে বাইরে থেকে রক্ত দেওয়া লাগতো। জিন থেরাপির মাধ্যমে উক্ত জিনটির স্থলে ভালো জিনটি বসানো হয়েছে ফলে বেটা-হিমোগ্লোবিন যুক্ত রক্ত তার দেহেই উৎপন্ন হচ্ছে।
জিন থেরাপির দ্বারা দৃষ্টিহীনতাও দূর করা সম্ভব। ব্রিটিশ চিকিৎসক সম্প্রতি এমন দাবিই করেছেন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে জেনেটিক থেরাপির মাধ্যমে প্রায় দৃষ্টিহীন হতে যাওয়া ব্যক্তিদেরও সারিয়ে তুলেছেন তাঁরা। এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে চোখের কোষে জিনের প্রবেশ ঘটিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এতে আলো শনাক্তকারী কোষগুলো উদ্দীপ্ত হয়। চিকিৎসকদের বিশ্বাস, এই চিকিৎসা দিয়ে একপর্যায়ে পুরোপুরি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরও সুস্থ করে তোলা যাবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট ম্যাকলারেন এই গবেষণা কাজের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, জনাথন উইয়াট (৬৩) নামে এক ব্যক্তি জিনগত সমস্যা করোইডেরেমিয়াতে আক্রান্ত ছিলেন। এই রোগে আক্রান্ত হলে চোখের পেছনে অবস্থিত আলো শনাক্তকারী কোষগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়। তবে অস্ত্রোপচারের পর দেখা গেছে তাঁর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ১। জিন থেরাপি-চিকিৎসা বিজ্ঞানের শেষ অধ্যায়।